প্রতিবন্ধিতা কোন বাঁধা নয় প্রতিবন্ধিতা কখনও বাঁধা হতে পারেনা। কারণ এটা জিনগত ও পারিপাশ্বিক বিভিন্ন সমস্যার কারনে সৃষ্ট। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় বিবেচনায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে তারা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি কর্ম দক্ষ হয়ে উঠবে। একসময় প্রতিবন্ধিতাকে সমাজের বোঝাস্বরূপ বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এটা এখন সত্য প্রমানিত যে, প্রতিবন্ধিতা কোন অভিশাপ নয়।
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ‘‘গ্লোবাল ডিসঅ্যাবিলিটি সামিটে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন ’’ বিষয়ক কর্মশালায় আলোচকরা এসব কথা বলেন। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর সেমিনার কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ কর্মশালা উদ্বোধন করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর পরিচালক (অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ) চলতি দায়িত্ব শেখ মজলিশ ফুয়াদ। কর্মশালার উদ্বোধক পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের অগ্রযাত্রা মসৃণ করতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত ও সামাজিক বৈষম্যে দূরীকরণে কুসংস্কার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন ও ফিচার তৈরির উপর জোর দেন। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের অধিকার,কর্মক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সহায়তাসহ স্বাস্থ্য ও ভাষা (শব্দ চয়নের) প্রয়োগে সংযমী হওয়ার কথা বলেন তিনি। পিআইবি’র মহাপরিচালক বলেন, সাংবাদিকতার শক্তিমত্ত্বা তখনই প্রকাশ পায় যখন সমাজের পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর জাতিকে তাদের ন্যায্যতা সমাজের সামনে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপর্সান মহুয়া পাল বলেন, প্রতিবন্ধিতা কখনও বাঁধা হতে পারেনা। কারণ এটা জিনগত ও পারিপাশ্বিক বিভিন্ন সমস্যার কারনে সৃষ্ট। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় বিবেচনায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করছে। কর্মশালায় অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, পরিবার ও সমাজে অসচেতনতার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন একসময় দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা যদি সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা করাতে পারি তবে তারা স্বাভাবিক মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ করে সুবর্ণ কার্ডের বিপরীতে ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি ও অনুদানসহ নানাবিধ সুযোগ প্রদান করছে। আলোচনায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক খায়রুজ্জামান কামাল অংশগ্রহণ করেন। তিনি মূলত সংবাদে ডিসঅ্যাবিলিটি উপস্থাপনার কৌশল ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা করেন। সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি পাঠক ও দর্শকের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুত করার কথা বলেন। কর্মমাশায় যমুন টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার তাজনুর ইসলাম বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম প্রতিবন্ধি ব্যক্তি ও তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি করছে। যার প্রভাব সমাজে পরিলক্ষিত হয়। এসব প্রতিবেদনের কারনে বর্তমানে প্রতিবন্ধিদের নিয়ে উপহাস ও এড়িয়ে চলার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া তিনি ক্লিক বেজ নিউজের যুগে প্রতিবন্ধি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে শব্দ চয়ন, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপনের উপর জোর দেন। দৈনিক কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার শাহনেওয়াজ খান সুমন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা নাগরিক, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।তিনিও সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পাঠকের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করেন বলে জানান। কর্মশালায় দৈনিক ইত্তেফাকের রাবেয়া বেবী বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন,উপস্থাপন এমনকি সবল -দূর্বল,কুটিল চরিত্র ইত্যাদি বিষয় প্রচার করা হয়। যা মূলত সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাবেয়া বেবী গণমাধ্যমে ডিসঅ্যাবিলিটি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী কিভাবে টিকে থাকে কর্মক্ষেত্রে তার ভূমিকা ও পদবী এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়া প্রতিবন্ধি ব্যক্তির অধিকারভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ,ক্ষমতায়ন ও জাগরনের বিষয় তুলে ধরেন। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিকেবদক মরিয়ম সেজুতি গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধি ব্যক্তির উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রতিবন্ধি আইন ও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেন। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা মেইলের সিনিয়র প্রতিবেদক মো. বুরহানউদ্দিন অংশগ্রহণ করেন। তিনি মিডিয়া বা গণমাধ্যমসমূহে প্রতিবন্ধিদের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে বলেন, মিডিয়া মনিটরিং বা গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধি ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও কিভাবে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটা অন্যতম গুরুত্ব বহন করে। কারন প্রতিবন্ধি ব্যক্তিকে প্রতিবেদনে শব্দ,ছবি, ভিডিওতে কিভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটা মূখ্য বিষয়। সেখানে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিকে দূর্বল নাকি সবল, কুটিল, অগ্রগতি বা অবনমন কোনটি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সেটা বিবেচ্য বিষয়। কর্মশালায় অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর প্রজেক্ট অফিসার এলিজাবেথ ইতি ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর প্রশিক্ষণ বিভাগের সহকারী প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দিন নিপুনের সমন্বয়ে মোট ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।