একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি জাফর ওয়াজেদ ২১ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন। মহাপরিচালক হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি সফলভাবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয়বারের মতো পিআইবি’র মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছে।
বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভিতে নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাদার সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু দৈনিক সংবাদে। সময়ের পরিক্রমায় তিনি দৈনিক সংবাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলাবাজার পত্রিকা ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
জাফর ওয়াজেদের কলম উদ্ভাসিত বহুমাত্রিকতায়। অভিজাত অন্দরমহল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে তাঁর কলমের বিচরণ ছিল অবলীলায়। সংবাদপত্রে কলাম লিখে পেয়েছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। দুঃসময়ে তাঁর কলম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, আর বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছে—আপসহীন।
সাংবাদিক সমাজের অন্যতম কণ্ঠস্বর জাফর ওয়াজেদ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাফর ওয়াজেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছিলেন ছাত্ররাজনীতির প্রথম সারির মুখ। ছাত্রাবস্থায় সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন। কবিতার আসর বসিয়ে আবার কখনো মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসপটে মুাক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রথিত করার কাজটিও করেছেন নিজ উদ্যোগে। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে। দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর নির্বাচিত সদস্য ও সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাফর ওয়াজেদের জন্ম কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জে তাঁর নানাবাড়িতে। পৈতৃক নিবাস একই জেলার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের জোড়পুকুরিয়া গ্রামে। বাবা প্রয়াত ইসমত আলী এবং মা রোকেয়া বেগম। সাত ভাইবোনের মধ্যে জাফর ওয়াজেদ ষষ্ঠ। স্ত্রী দিলশান আরা লাকি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এই দম্পতির দুই কন্যাসন্তান রয়েছে।
‘দেশ তার হারায় গৌরব’ ও ‘গ্রীমস ফেয়ারি টেলস’ নামের দুটি গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘মুজিব লোকান্তরে মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’, ‘বাঙালির আরাধ্য পুরুষ’-সহ বেশকিছু গ্রন্থ।
সাংবাদিকতায় গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাফর ওয়াজেদকে ২০২০ সালে সাংবাদিকতায় ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত করা হয়।