Wellcome to National Portal
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন

Selina Parvinসাংবাদিক, কবি সেলিনা পারভিন ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। মৌলভী আবিদুর রহমান এবং সাজেদা খাতুনের কন্যা সেলিনা পারভিন ললনা পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি সাপ্তাহিক বেগম এবং শিলালিপিতে এডিটর হিসেবে কাজ করেন। পাক বাহিনীর দোসর আল বদর বাহিনীর হাতে খুন হওয়া শহীদ সাংবাদিকদের মধ্যে সেলিনা পারভিন অন্যতম  যাকে ১৪ ডিসেম্বর তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। 

১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলেও তিনি পাস করতে পারেননি। ১৯৫৭ সালে মিটফোর্ড কলেজ থেকে নার্সিং এর প্রশিক্ষণ নেন এবং কিছু সময়ের জন্য ১৯৫৯ সালে রোকেয়া হলে মেট্রনের কাজ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি আজিমপুর  বেবী হোমে শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কাজ করেন। তিনি দুবার বিয়ে করেন এবং সুমন জাহিদ নামে তার একজন ছেলে সন্তান আছে।

ফেনীতে ছাত্র পড়িয়ে কর্মজীবন শুরু  সেলিনা পারভীনের। প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৭ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে রোকেয়া হলে মেট্রনের চাকরি , ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবীহোমে  শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিম খানায় চাকরি নেন। ১৯৬৬ সালে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদিকার সেক্রেটারি হিসেবে কাজে যোগদান করেন। তখন থেকেই নিবন্ধ রচনা ও সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাপ্তাহিক ললনায় বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মরত  আর ১৯৬৯ সালে নিজেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের সাহিত্য পত্রিকা শিলালিপি (অনিয়মিত) প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। বর্তমান সময়ের দেশ বরেণ্য কবি – সাহিত্যিকরা ছাড়াও শহীদ জহির রায়হান, শহীদ মুনীর চৌধুরী, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার এবং আরও অনেকে এই পত্রিকাতে লিখতেন। পত্রিকার প্রচ্ছদ আঁকতেন শিল্পী হাশেম খান।

শিশু সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আখতার হুসেনের মতে  'ললনায় কাজ করার সময়ই  সেলিনা পারভীন নিজের সম্পাদনায় বের করেন শিলালিপি সাহিত্য পত্রিকা'।  ৭১ এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ললনা প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় । ফলে সেলিনা পারভীন শিলালিপি নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। এবং নিজেকে মুক্তি সংগ্রামে জড়িয়ে ফেলেন। শিলালিপি পত্রিকার বিক্রয় লব্ধ অর্থ দিয়ে তিনি সেইসময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের  ওষুধ , অর্থ , খাবার দিয়ে সহযোগিতা করতেন। মকবুলা মঞ্জুরের লেখনী থেকে জানা যায় 'হঠাৎ একদিন দৈনিক পূর্বদেশ অফিসে দেখেন  সেলিনা পারভীন বেশ সহজভাবে গল্প করছেন সাংবাদিক আ ন ম মোস্তফা কামালের টেবিলে বসে। বলছেন কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে সাহায্য করছেন। কীভাবে প্রয়োজনে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখে ওষুধপত্র সরবরাহ করছেন। সামনে শীত আসছে ওদের শীতবস্ত্রের যোগাড় রাখতে হবে ইত্যাদি। স্বল্পভাষী মোস্তফা ভাই দু' একবার অন্য কথা তুলে তাঁকে থামাতে চাইলেন। আশেপাশে লোকজন ঘুরছে । কাজের উছিলায় কতজন এসে মোস্তফা ভাইয়ের টেবিলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মকবুলা মনজুর সেলিনা পারভীনকে মৃদু ধমকে বলেছিলেন 'আহ মনি আপা! এসব কথা কী এখন না বললেই নয়'? মনি আপা হেসে উঠে বলেছিলেন 'আরে এখানে আমরা সবাই বাঙালি , সবাই মনে মনে মুক্তিযোদ্ধা। এখানে ভয় কি'?   আখতার হুসেনের ভাষায় '১৯৬৯ সালে একদিন ললনা অফিসে গিয়ে দেখি মুহাম্মদ আখতার ভাই সেলিনা আপাকে ধমকাচ্ছেন। বলছেন "থাকেন বিহারীদের মধ্যে আর মিটিং মিছিল কোনটাই বাদ দেন না। সাবধানে থাকবেন না! সেলিনা আপাও পাল্টাপাল্টি বলছেন আপনিও ত কম কিছু করছেন না, পুলিশের লোকজন  প্রেসের চারপাশে ঘুরঘুর করছে।

সেলিনা পারভিনের ছেলে সুমন জানান “মা ছিল একটু শীত কাতুরে। সবসময় পায়ে মোজা আর স্কার্ফ ব্যবহার করতেন। ১৩ই ডিসেম্বর যেদিন বাড়ি থেকে আম্মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তখন তাঁর পরনে ছিল সাদা শাড়ি- ব্লাউজ, সাদা স্কার্ফ, পায়ে সাদা জুতা ও মোজা। ফলে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে অনেক শহীদদের মধ্যেও আত্মীয়রা মাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন সহজেই। ১৪ই ডিসেম্বর আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর মত পাকিস্তানের দালাল আলবদর বাহিনী তাঁকে হত্যা করে”। 

বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরিজ ৯১’ এ  তাঁর নামে ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এক আদেশবলে  মৌচাক মোড় থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন সড়ক’ নামকরণ করেছে।  

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক (গ্রন্থটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)