মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবুল বাশার বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বেশ কিছু গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ অফিসার আব্দুল গনি চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান আবুল বাশার ১৯৬৮ সালে মর্নিং নিউজ পত্রিকার মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিকতায় তীব্র আকর্ষণের কারণে আবুল বাশার লাহোরে যান সাংবাদিকতা পড়তে। পরে তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী শেষ করে মর্নিং নিউজে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে পাক বাহিনী তাঁকে মগবাজারের বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি। একবার তাঁর বাবা বলেছিলেন "আমি কখনই আমার ছেলের কাছ থেকে টাকা পয়সা চাইনি , শুধু চেয়েছি সে যেন একজন সৎ সাংবাদিক হয়"।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই আবুল বাশার মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। এই কলম সৈনিক অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীক্ষিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বন্ধুদের সাথে নিয়ে একের পর এক অপারেশন চালিয়ে যেতে থাকেন।
খুব অল্প সময়ে আবুল বাশার সহকর্মীদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নেন। হাসিখুশি, তারুণ্যে ভরপুর এবং একই সাথে পরিপাটি পোশাক ও কালো ফ্রেমের চশমায় বুদ্ধিদীপ্ত বাশারের অমায়িক ব্যবহার সহজেই সবাইকে মুগ্ধ করত। সাংবাদিক বাশার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মর্নিং নিউজে তাঁর তৎকালীন সহকর্মী গোলাম তাহাবুর বলেন " নতুন সাংবাদিক হিসেবে কেমন করে যেন বাশারের সঙে আমার হঠাৎ গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠল। খুব তাড়াতাড়ি পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে আমরা খুব কাছাকাছি এসে গেলাম। ঊনসত্তরের সেই রক্তমাখা গণ আন্দোলনের দিনগুলোতে পেশাগত কাজের ব্যস্ততার মধ্যে আমরা একসাথে সাংবাদিকতা করেছি। খবরের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছি এদিক সেদিক। পেশার অন্য বন্ধুরা বিশেষ করে সিনিয়ররা আমাদের নাম দিয়েছিলেন 'মানিক-জোড়'।
ঢাকার মগবাজারে তাঁর বন্ধু আজাদের বাসায় আজাদ ও তার মায়ের সাথে থাকতেন তিনি। গোলাম তাহাবুর বাশার সম্পর্কে আরও বলেন "১৯৭১ এর সেই উত্তাল সময়ে মর্নিং নিউজের কাজ ছাড়াও আবুল বাশার ক্রমেই ব্যস্ত ও অস্থির হয়ে পড়ছিলেন দেশের কথা ভেবে"। মগবাজারের সেই বাড়িকে কেন্দ্র করেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠেছিল। আর সেই বাহিনীর আশ্রয় ও সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন আবুল বাশার নিজে এবং সেই বাড়িটি । ১৯৭২ সালে মর্নিং নিউজে প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায় , ১৯৭১ এর সংগ্রামের শেষের দিকে ঢাকার মগবাজার এলাকায় মুক্তিবাহিনী একটি অপারেশন চালায় । মুক্তিবাহিনীর এই দলের বেশ কজন সদস্য থাকতো বাশারের মগবাজারের বাড়িতে । আর এই সংবাদ পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিল স্থানীয় কয়েকজন বিশ্বাসঘাতক আলবদর সদস্য। ঘাতকদের সংবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তান আর্মির একটি দল তাদের বাড়িটি ঘেরাও করে ফেলে । কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্তানী বাহিনী বাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে । এই অবস্থায় আবুল বাশার , আজাদ ও তার বন্ধুদের আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। কিন্তু সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বাড়ির ভেতরে অবস্থান করেই পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ এই যুদ্ধ চলতে থাকে । যুদ্ধের এক পর্যায়ে আবুল বাশার ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু গুরতর আহত হন।
গুরতর আহত আবুল বাশারসহ চারজনকে পাকিস্তানী বাহিনী ধরে নিয়ে যায় সেকেন্ড ক্যাপিটাল এলাকায় পাকিস্তান আর্মি সেলে এবং আজ অব্দি তাঁর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
# বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক (গ্রন্থটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)