‘জয়বাংলা’ এই শব্দটি মৃত্যুর সময় যার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল তিনি শহীদ সাংবাদিক চিশতী শাহ্ হেলালুর রহমান। হেলালুর রহমান ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার রহমান নগরে জন্মগ্রহণ করেন। বেসরকারী চাকরিজীবী চিশতী মনসুর রহমান এবং সাজেদা খাতুনের ৪ সন্তানের মধ্যে হেলালুর ছিলেন সবার বড়। বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে ১৯৭১ সালে তিনি আজাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
বগুড়া জেলা স্কুল থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক এবং বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে যথাক্রমে ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালে।
মাতৃভক্ত হেলাল লেখাপড়া কাজের ফাঁকে মাকেও দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতেন। স্কুল জীবনেই তিনি স্কাউটিং এ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একাধিকবার জাম্বুরীতে অংশগ্রহণ করেছেন। স্কুল নাট্যদলেরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। একাধিক নাটকে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। আবাসিক ছাত্র হিসেবে হেলালুর সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তার সাংবাদিকতা শুরু । ১৯৭১ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ছিলেন। বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল। তিনি ১৯৬৯ সালে ইকবাল হল শাখা ছাত্র সংসদের পাঠাগার সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি ছিলেন।
হেলালুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রনেতা হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সচেতন, সাহসী এবং সংগঠক হিসেবে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সাহসী ভূমিকা। ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা পতাকা উত্তোলন দিবসে তিনি ছাত্রলীগ প্যারেডে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তানকে নিজের দেশ মনে করতেন না বিধায় পাকিস্তানের পতাকা এবং জাতীয় সংগীতকে সম্মান দেখাননি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৯১ তারিখে "শহীদ বুদ্ধিজীবী টিকেট নবম পর্যায়' - এ হেলালুর রহমানের নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। তিনি ছিলেন বগুড়ার প্রথম শহীদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে শহীদ চিশতী লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে।