‘সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর নিলফামারীর পঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম জহিরুদ্দিন আহমেদ।
শিক্ষা জীবন নীলফামারির মেলাপঙ্গা মাদ্রাসায়। পরে ভর্তি হন দিনাজপুর স্কুলে। স্কুল জীবনেই তাঁর লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়। স্কুল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতেন তিনি। দিনাজপুর জেলা স্কুল ছাত্র সংসদের সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই স্কুল থেকেই ১৯৫৮ সাল তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর দিনাজপুরেই সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ভর্তি হবার পর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। ১৯৬২ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে দিনাজপুরে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় ১৯৬৩ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদে সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি মাসিক মোহাম্মদীও সম্পাদনা করতেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এই পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। নাটক লিখতেন। নাটকে অভিনয়ও করতেন। পাশাপাশি সম্পাদনা করতেন ‘অন্তরঙ্গ’ নামে একটি সাময়িকী। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় দৈনিক আজাদ পত্রিকায় রাজনৈতিক কলাম লিখে সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কলাম আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। অসাধারণ শ্রম, মেধা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের ভুবনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তিনি। তাঁর কর্মময় জীবন জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে অনন্তকাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ ঢাকার বাঙালিরা যখন ভীতসন্ত্রস্ত, কথা বলতো নীচু স্বরে তখনো তিনি স্বভাবসুলভ উচ্চস্বরে কথা বলতে ভালোবাসতেন। স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিলো তাঁর অন্তরে। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন।
১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর ঘাতকচক্র তাঁকে ঢাকার গোপীবাগের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর।