সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ১৯২৯ সালের ১লা মার্চ মাগুরা জেলার শালিখা থানার শরুশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলবী মাযহারুল হক ও মা আশরাফুন্নেসা। সিরাজুদ্দীন হোসেন ১৯৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় দৈনিক আজাদে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে তিনি দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক হন। ১৯৫৪ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি কোনদিন শাসক শ্রেণির কাছে আত্মসমর্পন করেননি। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে তাঁর যুক্ততা ছিল। কলম সচল ছিল প্রতিটি ক্ষেত্রেই।তিনি ছিলেন আগাগোড়া অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। তাই অনেকের মতো তাঁকেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর ঘাতকের টার্গেটে পরিণত হতে হয়েছিল।
অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে জনকের ভূমকিায় ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় ইত্তেফাকের সংবাদ পরিবেশনা ছিল অসাধারণ। এরই ধারাবাহিকতায় একাত্তর সালটি ছিল সিরাজুদ্দীন হোসেনের রাজনৈতিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বলতম অধ্যায়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের সমর্থনে ইত্তেফাকের মিশন জার্নালিজম আজ ইতিহাস। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন সিরাজুদ্দীন। ১ মার্চ যখন ইয়াহিয়া’র বেতার ভাষণে পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা এলো, তারপর থেকেই ইত্তেফাকে প্রকাশিত হতে থাকলো একের পর এক জ্বালাময়ী রিপোর্ট। সিরাজুদ্দীন এসব রিপোর্টের শিরোনামগুলো এমনভাবে লিখতেন যেগুলো মানুষের আন্দোলনকে আরো বেশী বেগবান করে তুলেছিল। তার লেখা উল্লেখযোগ্য শিরোনামগুলোর মধ্যে রয়েছে-“বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন”, “আমি শেখ মুজিব বলছি”এবং “জয় বাংলার জয়”। মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে বারবার তিনি প্রবাসি সরকারের কাছে গোপন তথ্য পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কনস্যুলেট প্রধান আর্চার ব্লাডের রিপোর্টটি তিনি গোপনে তাজউদ্দীন আহমদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ নিয়ে তার একটি অনবদ্য বই আছে ‘লুক ইন্টু দ্যা মিরর’।
১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাঁকে শান্তিনগর চামেলীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।