শহীদ সাংবাদিক শিবসাধন চক্রবর্তী ১৯৪৬ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার বিরাহিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলশিক্ষক হরেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী এবং গৃহিণী সুনিতীপ্রভা চক্রবর্তীর ছয় সন্তানের মধ্যে শিবসাধন ছিলেন সবার বড়। পাকিস্তান অবজারভারে সহ সম্পাদক হিসেবে তাঁর সাংবাদিকতার পথচলা শুরু। পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ রাতে রমনা কালীমন্দির এলাকাতে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালালে শিবসাধনও অনেকের সাথে খুন হন। তাঁর মরদেহটি অবশ্য সনাক্ত করা যায়নি।
মেধাবী শিবসাধন ১৯৬১ সালে নোয়াখালীর বসুরহাট আব্দুল হালিম করোনেশন মডেল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৬৫ সালে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি কল্যাণদি হাইস্কুল এবং ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতৃ ভূঁইয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শিবু ম্যাট্রিকে নোয়াখালী জেলার মধ্যে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন। উচ্চ মাধ্যমিকেও তিনি প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে শিবসাধন পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। অবজারভারের সম্পাদক তখন আব্দুস সালাম। অবজারভারে সহ সম্পাদক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিবসাধনের সাংবাদিকতা জীবন। কর্মক্ষেত্রে স্বল্পভাষী এবং মেধাবী হওয়ার কারনে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শিবসাধন সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন । অবজারভারে যোগদানের পর শিবু থাকতেন ঢাকার গোপীবাগে। ১৯৭০ সালে গোপীবাগের বাসা ছেড়ে তিনি রমনা কালীমন্দির মেসে ওঠেন। যদিও তার এই নতুন আবাস্থল অনেকেই নিরাপদ বলে মনে করতেন না। ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের আসন্ন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা ভেবে শিবুর ছোট ভাই ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার কথা বলেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ২৭ মার্চ রমনা কালী মন্দিরে পাক বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে যে ৩০০'র মত মানুষ মারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শিবসাধনও ছিলেন।
শিবসাধন চক্রবর্তীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর ভাই ডেইলি সানের সাংবাদিক তরুণ তপন চক্রবর্তী বলেন "তিনি বয়সে আমার বড় হলেও তাঁর সংগে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কোন কিছু করা বা কোন সিন্ধান্ত নেবার আগে তিনি আমাদের সাথে পরামর্শ করতেন। সবার মতামত তিনি শুনতেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।
তাঁর আদর্শ ছিল স্বামী বিবেকানন্দ এবং কাজী নজরুল ইসলাম। পছন্দ করতেন মাইকেল মধুসূদনের কবিতা পড়তে ও আবৃত্তি করতে। ভালবাসতেন ফুটবল খেলতে ও নৌকা চালাতে। ক্লাশ সেভেনের ছাত্র থাকা অবস্থায় একজন ডাক্তারের সাথে একটি শব্দকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়ে তিনি এ টি ডেভের স্টুডেন্টস ফেভারিট ডিকশনারী মুখস্ত করে ফেলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বোনের বিয়েতে বঙ্গবন্ধু আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন কিন্তু এর বেশি কোন সাহায্য তার পরিবার পরবর্তীতে পায়নি।
# বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক (গ্রন্থটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস।
কারিগরি সহায়তায়: