Wellcome to National Portal
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে পিআইবিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত


প্রকাশন তারিখ : 2023-12-14

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিই জাতিসত্ত্বার ধারক একটি জাতিসত্ত্বা নিশ্চিহ্ন করতে হলে সেই জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়। নতুবা সেই জাতির পুর্নজন্ম হয়। আর জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক,শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবি। তাই পাকিস্তানী সামরিক জান্তা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাছাই করে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক,শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবিদের হত্যা করে। যেন বাঙালি জাতি কখন নিজস্ব সত্ত্বায় দাঁড়াতে না পারে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৩) ‘‘হৃদয়ে রবে প্রেরণায়’’ স্লোগানকে ধারণ করে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি’র) আয়োজনে পিআইবি’র সেমিনার কক্ষে আলোচকরা এসব কথা বলেন। পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সেমিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। আলোচনা করেন শহিদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান জাহিদ রেজা নূর ও শহিদ সাংবাদিক শিবসাধন চক্রবর্তীর সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা তরুণ তপন চক্রবর্তী। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর পরিচালক (প্রশাসন)চলতি দায়িত্ব মো. জাকির হোসেন, প্রকাশনা ও ফিচার বিভাগের সহযোগী সম্পাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক চলতি দায়িত্ব শেখ মজলিশ ফুয়াদ এবং গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব ড. কামরুল হক। সেমিনারের মডারেটর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের গণমাধ্যম ছিল অবরুদ্ধ। তারপরও সাংবাদিকরা বিভিন্ন পন্থায় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করে জনমনে আস্থার সঞ্চার করছেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু সাংবাদিকের গুপ্তচরবৃত্তির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শিক্ষক এবং অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের কথা বলেন। নতুন প্রজন্মকে তিনি ইতিহাসের পাঠোদ্ধারের সহায়তায় জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে শিল্পী সমাজের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন মহাপরিচালক।  আলোচনায় শহিদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান জাহিদ রেজা নূর বলেন, একটি জাতিসত্ত্বা নিশ্চিহ্ন করতে হলে সেই জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়। নতুবা সেই জাতির পুর্নজন্ম হয়। আর জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক,শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবি। তাই পাকিস্তানী সামরিক জান্তা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাছাই করে ধারাবহিকভাবে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক,শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবিদের হত্যা করে। যেন বাঙালি জাতি কখন নিজস্ব সত্ত্বায় দাঁড়াতে না পারে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি অসাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সাম্যের মাধ্যমে একটি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। জাহিদ রেজা নূর বলেন, একাত্তরে ঢাকার ম্যাসাকারের দায়িত্বে ছিল রাও ফরমান আলী ও ঢাকার বাহিরে খাদেম হোসেন রাজা। তৎকালীন সময়ে সাংবাদিক সায়মন ড্রিং ৩০ মার্চ ঢাকার প্রকৃত চিত্র দ্যা টেলিগ্রাফে তুলে ধরেন। পকিস্তানীরা নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে যখন এদেশের মেধাশূন্য করতে তৎপর তার একটি বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর রাও ফরমান গর্ভণরের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর ১০ ডিসেম্বর হতে ১৩ ডিসেম্বর তারা পর্যায়ক্রমে সাংবাদিক হত্যা করে, ১৪ ডিসেম্বর শিক্ষক, ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসক এভাবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হত্যা করতে থাকে। যদি ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো তাহলে তারা আরো কতটা ভয়ংকর হতো সেটা অনুমানযোগ্য। শহিদ সাংবাদিক শিব সাধন চক্রবর্তীর সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা তরুণ তপন চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ উত্তর ও পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম। যা আমরা নয় মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছি। তিনি পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি সৈনিক বিরুদ্ধে গঠিত ট্রায়ালের কথাও উল্লেখ করেন।   পিআইবি’র পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসেন বলেন, একটি জাতিকে মেধাশূন্য করতে হলে যা করার দরকার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তার সবকিছুই করেছিল একাত্তরে। তারা বাছাই করে এদেশের রাজনীতিবিদ,সাংবাদিক, শিক্ষক,চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীপেশার লোককে হত্যা করে বাঙালি জাতিসত্ত্বা চিরতরে নিস্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আর একাজ করতে সক্ষম হয়েছিল এদেশীয় তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসের সহায়তায়। তারা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।  সেমিনারটি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রশিক্ষক চলতি দায়িত্ব মোহাম্মদ শাহ আলমের সমন্বয়ে মোট ২৮ জন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক অংশগ্রহণ করেন।